সাজেক উপত্যকা(মেঘের রাজ্য সাজেক)
ইতিহাসঃ
সাজেক রুইলুইপাড়া, হামারিপাড়া এবং কংলাক পাড়া, এই তিনটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রুইলুই পাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,৭২০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত আর কংলাক পাড়া ১,৮০০ ফুট উচ্চতায় কংলাক পাহাড়-এ অবস্থিত। সাজেকে মূলত লুসাই, পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা উপজাতি বসবাস করে। রাঙামাটির অনেকটা অংশই দেখে যায় সাজেক ভ্যালি থেকে। এই জন্য সাজেক ভ্যালিকে রাঙামাটির ছাদ বলা হয়।
কর্ণফুলী নদী থেকে উদ্ভূত সাজেক নদী থেকে সাজেক ভ্যালির নাম এসেছে।
অবস্থানঃ
সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলার সর্বউত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। আর দীঘিনালা থেকে প্রায় ৪৯ কিলোমিটার। সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও খাগড়াছড়ি থেকে এখানে যাতায়াত সুবিধাজনক।[৪] সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম, পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা অবস্থিত। সাজেক ইউনিয়ন হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন; যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। এখানে সাজেক বিজিবি ক্যাম্প রয়েছে।
প্রাকৃতিক রূপঃ
সাজেকে সর্বত্র মেঘ, পাহাড় আর সবুজ। এখান থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায়। সাজেকের রুই-লুই পাড়া থেকে ট্রেকিং করে কংলাক পাহাড়-এ যাওয়া যায়। কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। কংলাকে যাওয়ার পথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড়, আদিবাসীদের জীবনযাপন, চারদিকে মেঘের আনাগোনা দেখা যায়। এখানে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে উপজাতিয় উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এবং তাদের সংস্কৃতির নানা উপকরণ উপভোগ করা যায়।
নৃ-গোষ্ঠীঃ
সাজেকে মূলত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের বসবাস রয়েছে । বিশেষ করে চাকমা, লুসাই, পাংখোয়া ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীরা বহু আদিকাল থেকে বসবাস করে আসছে । তাঁদের বাড়িঘর বাঁশের মাচাংয়ের উপর তৈরি করা।
কংলাক পাহাড়
কংলাক পাহাড় বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি সাজেক ভ্যালির সর্বোচ্চ চূড়া। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট।
বিবরণঃ
কংলাক পাহাড়ের উপরে কংলাক পাড়া অবস্থিত। সাজেক ভ্যালি মূলত রুইলুই পাড়া এবং কংলাক পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। কংলাক পাহাড় থেকে লুসাই পাহাড় স্পষ্ট দেখা যায়। চারদিকে পাহাড়, সবুজ আর মেঘের অকৃত্রিম মিতালী চোখে পড়ে। সাজেক ভ্রমণরত পর্যটকদের কাছে এটি এখন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। রুইলুই পাড়া হতে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরত্বে এটি অবস্থিত; সাজেকের হ্যালিপ্যাড হতে ৩০-৪০ মিনিট ট্রেকিং করে কংলাক পাড়ায় যেতে হয়।
নামকরণঃ
কংলাক পাড়াটি কমলাক পাড়া নামেও পরিচিত। স্থানীয় তথ্য মতে, এই পাড়াটির পাশে বড় বড় কমলা বাগান অবস্থিত বলে এটিকে কমলাক পাড়া বলা হয়। পাহাড়ের নিচে কংলাক ঝর্ণা অবস্থিত এবং এই ঝর্নার নামানুসারেই এই পাহাড়ের নামকরণ করা হয়েছে।
কংলাক পাড়ার জীবনযাত্রাঃ
পাহাড়চূড়ার ছোট্ট গ্রামটিতে ত্রিপুরা ও লুসাই নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস৷ জুম চাষ এ পাড়ার প্রধান খাদ্য ও উপার্জনের উৎস। বেশি চাষ হয় হলুদ, আদা ও কমলার। কংলাকে পানি সংকট রয়েছে। প্রতিটি বাড়িতেই চোখে পড়বে একাধিক ও বড়বড় পানির রিজার্ভার। বৃষ্টির জমানো পানিই এ পাড়ার পানির মূল উৎস। অধিবাসীরা ঘরের চালা থেকে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে রিজার্ভারে ধরে রাখেন ও দৈনন্দিন কার্যাদি সম্পন্ন করেন।
সর্তকতা
পথ কিছুটা ঢালু এবং বর্ষার সময় পিচ্ছিল থাকায় বয়স্ক ও শিশুদের উপরে উঠতে নিরুৎসাহী করা হয়। এলাকায় পানি কিছুটা অপ্রতুল বলে পর্যটকদের সাথে করে পানি নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
0 Comments
Please do not enter any spam link in the comment box.